ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৮/০১/২০২৫ ১২:১৩ পিএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় পাত্রী দেখতে যাচ্ছিলেন এক পরিবারের সাতজন। শীতের দুপুরে বেশ উচ্ছ্বসিত ছিলেন সবাই। তাদের সেই উচ্ছ্বাস মুহূর্তে রূপ নেয় বিষাদে। হঠাৎ ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে খাদে পড়ে যায় মাইক্রোবাস। এতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন।

গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুর সদরের গেরদা এলাকার রাজবাড়ী-ভাঙ্গা রেলপথে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন– নারায়ণগঞ্জের ভূঁইয়াপাড়ার আবু সাঈদের স্ত্রী আতিফা রহমান ভূঁইয়া, শ্যালিকা ফাহমিদা শারমিন মুন, মুনের স্বামী মামুন চৌধুরী লিটন, সাঈদের চাচাতো বোন সাজিয়া আফরিন সাজু ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী উম্মে মাহমুদা রিংকু। আহত হয়েছেন দুর্ঘটনায় নিহত মামুন-মুন দম্পতির মেয়ে তাজরিন (১৬) ও মাইক্রোবাসচালক জিন্নাহ। তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

আহত তাজরিন জানায়, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়ায় চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যাচ্ছিল তারা। আরও কয়েকজনের আসার কথা ছিল। তাদের দেরি হওয়ায় ফরিদপুর শহরের গেরদা থেকে মুন্সিবাজারের দিকে ঘুরতে যাচ্ছিল তারা। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গেরদা এলাকার রেলগেটে উঠতেই তাদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয় ট্রেন। এতে গাড়িটি খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তাঁর বাবাসহ তিনজন। আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়ার পর আরও দু’জনের মৃত্যু হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবু নাইম বলেন, মাইক্রোবাসটি রেললাইনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী থেকে ফরিদপুর হয়ে ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দেয়। গাড়িটি প্রায় ১০০ গজ ঠেলে নিয়ে যায় ট্রেন। এক পর্যায়ে রেললাইনের পাশে একটি পিলারে ধাক্কা লেগে পাশের খাদে পড়ে যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, যে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানের সড়কে দু’পাশে রেলের জমি দখল করে বেশ কয়েকটি দোকান গড়ে উঠেছে। রয়েছে কয়েকটি গাছ। গেরদার দিক থেকে মুন্সিবাজারের দিকে সড়কটি সোজাসুজি চলে গেছে। দু’পাশে দোকান থাকায় এবং হুইসেল না দেওয়ায় ট্রেন আসা-যাওয়ার বিষয়টি দেখা ও বোঝা যায় না।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রেজাউল করিম বলেন, রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। কোনো গেট নেই। দোকানের কারণে হুইসেল না দিলে ট্রেন আসছে কিনা বোঝা যায় না। গতকাল ট্রেনটি কোনো হুইসেল দেয়নি; তবে দুর্ঘটনা দিয়েছে।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে যান। ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে দু’জন মারা যান। ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি নিচের খাদে পড়ে গিয়েছিল। সেটি উদ্ধার করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্লা ও পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কামরুল হাসান বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তিদের মরদেহ বহন ও দাফনের যাবতীয় খরচ বহন করবে জেলা প্রশাসন।

ফরিদপুর রেলের স্টেশন মাস্টার তাকদির হোসেন জানান, মুন্সিবাজার রেলক্রসিং রেল বিভাগের অনুমোদিত নয়। তবে এ ক্রসিংটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গেট ও গেটম্যান দেওয়ার জন্য তিনি রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানাবেন।

রেলওয়ে রাজবাড়ী থানার ওসি আশিক মো. সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, স্বজনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাজবাড়ী রেলওয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

পাঠকের মতামত